স্বাগতম
  দোহার পৌরসভার ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম   নিয়মিত পৌর কর নিয়মিত পরিশোধ করুন   মাদক মুক্ত সমাজ গঠন করুন   যে কোন স্থাপনা নির্মাণের জন্য পৌরসভার অনুমোদন গ্রহন করুন এবং পরিকল্পিত নগরায়ণে সহায়তা করুন   আবর্জনা সঠিক স্থানে ফেলুন   আপনার সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করুন   আপনার পৌরসভাকে পরিচ্ছন্ন রাখুন।

দোহার পৌরসভার ইতিহাস

বাংলাদেশের ঢাকা জেলার অন্তর্গত বর্তমান দোহার উপজেলা প্রথম বৃটিশ শাসনামলে ১৯২৬ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর পাকিস্তান আমলেও এটি পুর্ব পাকিস্তানের একটি থানা হিসেবেই থেকে যায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও এটি থানা হিসেবেই থেকে যায়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে দোহার ১৯৮৩ সালে ‍উপজেলা হিসাবে ‍উন্নীত হয়। উপজেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের পর এতদ্বঅঞ্চলের আর্থিক কর্মকান্ড বেড়ে যায়। এতদ্বঅঞ্চলের সবচেয়ে বড় বাজার জয়পাড়া-দেবীনগর হাট-বাজার কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। ফলে উপজেলা ও বাজার কেন্দ্রিক দ্রুত নগরায়ন ঘটতে থাকে। এই নগরায়নের পেছনে এই অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক প্রবাসী জনগোষ্ঠীরও বিরাট ভুমিকা রয়েছে। দ্রুত নগরায়নের ফলে নাগরিক চাহিদা বাড়তে থাকে, যা জয়পাড়া ইউনিয়ন পরিষদসহ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদগুলোর পক্ষে মেটানো সম্ভবপর হচ্ছিল না। ফলশ্রুতিতে, দোহার উপজেলার কেন্দ্রীয় শহরাংশ অর্থাৎ জয়পাড়া ইউনিয়ন (সম্পূর্ণ), সুতারপাড়া ইউনিয়ন (আংশিক) এবং রাইপাড়া ইউনিয়ন (আংশিক) নিয়ে ২০০০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী দোহার পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়।

জনশ্রুতি আছে, এক সময়ে এতদ্বঅঞ্চলের হিন্দু জমিদারগণ গিতিগানের ভক্ত ছিলেন। যারা এই গিতিগানে মূলগায়াকের সহযোগী বা দ্বিতীয় পক্ষ হিসাবে গান গাইতেন তাদেরকে স্থানীয়ভাবে দোহার বলা হত। হিন্দু জমিদারগণ এই দোহারগণকে এই অঞ্চলে বসতি স্থাপনের অনুমতি দেন। ফলশ্রুতিতে এই অঞ্চলের নাম হয়ে যায় দোহার। বৃটিশ শাসনামলে এই অঞ্চল হিন্দু জমিদারগণ শাসন করতেন। ১৯২০ সালে মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন দ্বারা এই অঞ্চলের জনগণ দারুন ভাবে প্রভাবিত হয়। ১৮৯২-৯৩ সালে মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে এখানে অভয় আশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪০ সালে গান্ধী সেবা সংঘের সমগ্র ভারত সম্মেলন এই উপজেলার মালিকান্দা গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন উপলক্ষে মহাত্না গান্ধী এখানে আসেন এবং 02 (দুই) দিন অবস্থান করেন।

ঢাকা জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একমাত্র পৌরসভা দোহার পৌরসভা । পৌরসভাটি ঢাকা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, প্রমত্তা পদ্মা নদী থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার উত্তরে এবং মাওয়াঘাট থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। অর্থাৎ পৌরসভাটি উত্তরে ইছামতি নদী ও নবাবগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণ-পশ্চিমে পদ্মা নদী এবং পূর্বে আড়িয়াল বিল দ্বারা বেষ্টিত।

প্রতিষ্ঠার পর হতে এ পযর্ন্ত আংশিক কর্তন-সংযোজন সাপেক্ষে দোহার পৌরসভার বর্তমান আয়তন ২১.১২ বর্গ কি.মি., ওয়াড সংখ্যা ০৯, হোল্ডিং সংখ্যা ১৩,৮০০ এবং বর্তমান জনসংখ্যা ৭৭,৮০০।

দোহার পৌরসভা প্রতিষ্ঠালাভের প্রায় ৩ বছরের মধ্যেই (২৭/১২/২০০৩) দ্বিতীয় শ্রেণীতে এবং ১০ বছরের মধ্যে (০৫/০১/২০১০) প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে ২০০৫ সন পযর্ন্ত পুরাতন ভবনে পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। পরবর্তীতে পৌরসভার নিজস্ব রাজস্ব আয় থেকে ০১(এক) একর জমি অধিগ্রহন পুর্বক পৌরসভা কার্যালয়টি বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে পৌরসভার ত্রিতলা বিশিষ্ট ভবন হতে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

দোহার পৌরসভার উন্নয়নমূলক কাজের গুনগত মান নিশ্চিতকল্পে পৌরসভার রয়েছে নিজস্ব কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবরেটরী। এছাড়া কর্মকর্তা বৃন্দের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে পৌরসভার রয়েছে নিজস্ব ত্রিতল বিশিষ্ট আবাসিক ভবন।

দোহার পৌরসভা প্রতিবছরই তার নিজস্ব রাজস্ব আয়ের অর্থ দিয়ে প্রতি ওয়া্র্ডে গড়ে ৭-১০ লক্ষ টাকার এবং সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের অর্থ দিয়ে প্রতি ওয়ার্ডে গড়ে ৭-৯ লক্ষ টাকার রাস্তা পাকাকরণ বা সেমিপাকা/কাঁচা রাস্তা নির্মাণ, ড্রেনেজ, কালর্ভাট, পুকুরঘাট, কবরস্থান, স্কুলমাঠ, পাবলিক টয়লেট, লাইটিং, গভীর নলকূপ স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে খাকে। বর্তমানেও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এছাড়া বিএমডিএফ সাব-প্রজেক্টস এর আওতায় ইতোমধ্যেই দোহার পৌরসভার কোর এরিয়া তথা জয়পাড়া বাজার এলাকার প্রধান সড়ক সহ অন্যন্য সড়কের উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া UGIIP, MGSP এবং City Region প্রকল্পে অন্তর্ভূক্তি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

উল্লেখ্য যে পৌরএলাকায় স্যানিটেশন কা্র্যক্রমের অগ্রগতি অত্যান্ত সন্তোষজনক। ইতিমধ্যে সরকারী নীতিমালার আলোকে একশত ভাগ স্যানিটেশন নিশ্চিত হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে পরিচ্ছন্নতার কাজ চলমান রয়েছে এবং সীমিত সংখ্যক ডাস্টাবিন স্থাপন করা হয়েছে।

পৌরসভার উন্নয়নমূলক এবং সেবামূলক কার্যক্রমের সাথে নাগরিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির লক্ষ্যে MAB (Municipal Association of Bangladesh)এবং MJF (Manusher jonno Foundation)এর সহায়তায় ২০১০-২০১১ অর্থ বছরে ‘‘ পৌর সু-শাসন সমৃদ্ধিকরণ ’’ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে পৌরএলাকায় ০৯ টি ওয়ার্ড ০৯ টিWC (Ward Committee) পৌরসভায় LCC (Town Level Co-ordination Committee), ওয়ার্ড ভিত্তিক Tax Campain (ট্যাক্স মেলা), ওয়ার্ড ভিত্তিক বাজেট মিটিং, নাগরিক সনদ প্রকাশসহ বিভিন্ন বার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এ ছাড়া পৌরকর্মকর্তা/কমর্চারীবৃন্দের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং জনগনের অংশ গ্রহন নিশ্চিত করণের লক্ষে ২০১১-২০১২ অর্থ বছর হতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক MSU (Municipal Support Unit)- এর মাধ্যমে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং কাজ চলমান রয়েছে। এই কর্মসূচীর আওতায় বর্তমানে ট্যাক্স এবং ট্রেড লাইসেন্স এ সম্পূর্ণ কম্পিউটারইজড বিলিং সিস্টেম চালু আছে।পাশাপাশি ব্যাংকের মাধ্যমে ট্যাক্স এবং ট্রেড লাইসেন্স এর বিল পরিশোধ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এই প্রকল্পের অধীনে পৌর মেয়র/ কাউন্সিলর/কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। যার ফলে পৌরসভার নাগরিক সেবা প্রদান যেমন সহজ হয়েছে পাশাপাশি রাজস্ব আয় অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।

উল্লেখ্য্ সম্প্রতি দোহার পৌরসভা জিওবি-আইডিবি এর অর্থায়নে ‘‘ বাংলাদেশের ২৩টি পৌরসভায় পানিসরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প ’’ শীর্ষক প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। উক্ত প্রকল্পের আওতায় দোহার পৌরসভায় গ্রাউন্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট সহ পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেম এবং স্লাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট সহ কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম চালু করার কথা রয়েছে।

এছাড়া প্রকল্প সহায়তায় অথবা নিজস্ব অর্থায়নে ভবিষ্যতে পৌর এলাকায় বাস টার্মিনাল, শিশু পার্ক এবং কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

দোহার পৌর এলাকায় তেমন কোন উল্লেখ যোগ্য উৎপাদনমূখী শিল্পকারখানা না থাকায় এবং অনেক এলাকা গ্রামীন অর্থ ভিত্তিক হওয়ায় অত্র পৌরসভার রাজস্ব আয় তুলনামূলক কম।

তথাপি পৌরসভার সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে পৌর এলাকার সুষম উন্নয়ন এবং পৌরবাসীর নাগরীক সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য পৌর কর্মকর্তা/ কর্মচারীসহ পৌর পরিষদ নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে চলেছে।


Back-to-top